আপনার কি কন্যা সন্তান রয়েছে ? তবে এই খবরটি আপনার জন্য। কন্যা সন্তানের পিতামাতার জন্য রয়েছে দারুণ সুখবর। ভারতের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যার জেরে স্কুলছুট মেয়েদের সংখ্যা অনেকাংশেই যথেষ্ট বেশি। এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ এবং নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা তো রয়েছেই। তাই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েরা যাতে স্বনির্ভর হতে পারে এবং উচ্চশিক্ষা লাভ করার মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারে তার জন্য কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে চালু করা হয়েছে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (Sukanya Samriddhi Yojana)। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও অভিযানের অঙ্গ হিসেবে এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করা হয়েছিল।
এই যোজনার অধীনে কন্যা সন্তানের পিতা মাতা অথবা অভিভাবকেরা তাদের কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা রাখতে পারেন এবং তাদের কন্যা সন্তানের একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সেই টাকা সুদ সহ ফেরত পেয়ে থাকেন, যার দ্বারা তারা তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারবেন। আপনিও যদি আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার খাতিরে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা (Sukanya Samriddhi Yojana) য় বিনিয়োগ করতে চান তবে এই খবরটি আপনার জন্য। তবে অনেক ভারতবাসীই এখনো পর্যন্ত এই যোজনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানেন না। আর তাই আজ আমরা সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে এই পোস্টে আলোচনা করতে চলেছি কারা কারা এই যোজনার সুবিধা পাবেন, এই যোজনার অধীনে কি কি সুবিধা পাবেন ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
কারা এই যোজনায় আবেদনের যোগ্য?
১. এই যোজনায় আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার কন্যা সন্তানের বয়স অবশ্যই ১০ বছরের কম হতে হবে। কন্যা সন্তানের বয়স ১০ বছরের বেশি হলে এই যোজনায় আবেদন করতে পারবেন না। তবে যে সকল কন্যা সন্তানের পিতা মাতা অথবা অভিভাবকরা তাদের কন্যা সন্তানের ১ বছর বয়সে এই যোজনায় তাদের নাম নথিভুক্ত করবেন সেই সকল কন্যা সন্তানেরা সব থেকে বেশি সুবিধা পাবেন।
২. এতদিন পর্যন্ত এই যোজনা কেবলমাত্র দুটি সন্তানের জন্য উপলব্ধ ছিল। তৃতীয় সন্তান এই যোজনার কোনরূপ সুবিধা পেত না। কিন্তু বর্তমানে নতুন নিয়ম অনুসারে তৃতীয় সন্তানও এই যোজনা সুবিধা পেতে চলেছে। তবে এক্ষেত্রে শর্তটি হল প্রথম সন্তানের পর যদি দ্বিতীয় সন্তান জমজ হয় তবেই তারা এই যোজনার সুবিধা পাবে। অথবা কোন ক্ষেত্রে যদি তিনটি সন্তান একসাথে জন্ম নেয় তবে তাদের পিতা, মাতা কিংবা অভিভাবক এই যোজনায় আবেদন করতে পারবেন।
এই যোজনার অধীনে কি কি সুবিধা পেতে চলেছেন আপনারা?
১. যে কন্যার নামে এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় অ্যাকাউন্ট খোলা হবে তার ১৮ বছর বয়স হলে তিনি নিজেই এই অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করতে পারবেন এবং ২১ বছর বয়স হলে এই টাকা তিনি নিজের উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে কিংবা ব্যবসার ক্ষেত্রে কিংবা বিয়ের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন।
২. এই যোজনার অধীনে অ্যাকাউন্ট খোলা হলে আয়করের ক্ষেত্রেও ছাড় পাবেন আপনারা। এছাড়াও ম্যাচিউরিটির পর যে অর্থ পাবেন তার ক্ষেত্রেও আয়করে ছাড় পাবেন আপনারা।
৩. এই যোজনায় আপনার কন্যা সন্তানের বয়স ১৪ বছর হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এই যোজনার অধীনে প্রতিমাসে টাকা জমা করতে হবে। এরপর থেকে কন্যা সন্তানের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এতদিন পর্যন্ত জমা অর্থের উপর সুদ প্রযোজ্য হবে এবং ১৮ বছরের পর এই অ্যাকাউন্ট কন্যা সন্তান তার নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করতে পারবেন।
৪. এই যোজনার অধীনে সর্বাধিক ৯.১ শতাংশ সুদের হারে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকার সুবিধা পাবে আপনার কন্যা সন্তান। যদিও প্রতি বছর এপ্রিল মাসে এই যোজনার সুদের হার পরিবর্তন করা হয়।
৫. যেকোনো রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে কিংবা পোস্ট অফিসে আপনারা এই যোজনার অধীনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
এই যোজনায় ন্যূনতম কত টাকা জমা করতে হবে?
এই যোজনার অধীনে প্রতিমাসে ন্যূনতম ২৫০ টাকা জমা করতে পারবেন। তবে ১.৫ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ জমা করলে এই যোজনার কোনরূপ সুবিধা পাওয়া যাবে না। এছাড়াও এতদিন পর্যন্ত প্রতি মাসে ন্যূনতম আড়াইশো টাকা জমা করতে না পারলে ওই অ্যাকাউন্টটিকে ডিফল্ট একাউন্ট হিসেবে ঘোষনা করে দেওয়া হতো। তবে এখন থেকে আর তা করা হবে না। এখন কোন পিতা-মাতা বা অভিভাবক যদি এই যোজনার অধীনে তাদের কন্যা সন্তানের জন্য নূন্যতম ২৫০ টাকা জমা করতে না পারেন তবে যে অর্থ জমা হয়েছে তার উপরেই সুদ প্রদান করা হবে কন্যা সন্তানের ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত।
১৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে কত টাকা করে জমা করতে হবে?
এই যোজনার সর্বাধিক প্রাপ্য মূল্য অর্থাৎ ১৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কোন কন্যা সন্তানের পিতা মাতা কিংবা অভিভাবক কে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৩০০০ টাকা করে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার একাউন্টে জমা করতে হবে। তবে বছরে ৩৬ হাজার টাকা সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা একাউন্টে জমা হবে। কন্যা সন্তানের ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত টাকা জমা করলে নির্দিষ্ট সুদের হারে তা ৯ লক্ষ টাকা হবে। কন্যার ২১ বছর বয়সে যখন আপনারা এই টাকা সুদ সহ ফেরত পাবেন তখন তার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।
এই যোজনার অধীনে নাম নথিভুক্ত করার জন্য কি কি নথি প্রয়োজন?
১. কন্যা সন্তানের জন্ম সার্টিফিকেট অথবা জন্মের শংসাপত্র।
২. কন্যা সন্তানের পিতা অথবা মাতা কিংবা অভিভাবকের প্যান কার্ড এবং আধার কার্ড।
৩. ঠিকানার প্রমাণপত্র (পাসপোর্ট/ রেশন কার্ড/ বিদ্যুৎ বিল/ টেলিফোন বিল)
এই রকম আরও নানান গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং নীচের ডানদিকের টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আজই জয়েন হন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।