অতীতে পণ্য কেনা বা বিক্রি করার জন্য কোনো প্রকার মুদ্রা ছিল না (Cryptocurrency). একটি পণ্যের বিনিময়ে আরেক পণ্য পাওয়া যেত। কিন্তু এরপর এলো মুদ্রা যা কাগজের তৈরি নোট অথবা ধাতুর তৈরি মুদ্রা (Currency) হতে পারে এবং আরো একটি মুদ্রা রয়েছে যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল (Digital Currency) সেটা হল ক্রিপ্টোকারেন্সি। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি প্রাইভেট ডিজিটাল কারেন্সি।
Cryptocurrency for Begineers in India
অন্যভাবে বললে বলা যেতে পারে, Cryptocurrency হল একপ্রকার ডিজিটাল কারেন্সি অফ ক্যাশ। ক্রিপ্টো শব্দটির অর্থ হল সিক্রেট বা গোপন এবং কারেন্সি শব্দের মানে হল অর্থ যার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের আগান প্রদান করা হয়। সবমিলিয়ে, Cryptocurrency অর্থ হলো গোপন অর্থ। ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি এনক্রিপটেড কারেন্সি যেখানে লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন থাকে এবং এর উপরে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির হাত থাকে না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? সুবিধা ও অসুবিধা জানুন
এই অনলাইন কারেন্সিকে হাত দিয়ে ছুঁতে পারা যায় না, কিন্তু এটির সাহায্যে অনলাইন লেনদেন করা সম্ভব হয়। ১৯৮৩ সালে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বা গুপ্ত মুদ্রা সূচনা হয়েছিল। ডেবিড চৌম নামক মার্কিন গুপ্ত লেখক ক্রিপ্টোকারেন্সির সূচনা করেছিলেন। যাকে আমরা Cryptocurrency বলে চিনি তাকে ডেভিড চৌম নাম দিয়েছিলেন ক্যাশ। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এই অদৃশ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কাজ করেছেন ডেভিড চৌম।
বিটকয়েন বিনিয়োগ পদ্ধতি!
সে সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন ডেভিড চৌম। ডেভিড চৌমের সেই নতুন প্রচেষ্টাকে প্রাণ দিয়েছিল Satoshi Nakamoto. যিনি এই কারেন্সিকে অনেকটা সফল করতে পেরেছিলেন এবং তিনি বিটকয়েনের (Bitcoin Cryptocurrency) আবিষ্কার করেছিলেন। সেই সময় থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন শুরু হয় এবং দিনের পর দিন ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
এই ক্রিপ্টোকারেন্সির নোট বা কয়েনের মতো ছাপা কোনো আক্ষরিক সংখ্যা নেই কিন্তু Cryptocurrency-র একটি নির্দিষ্ট মূল্য বা ভ্যালু আছে। এটি ডিজিট আকারে অনলাইনে থাকায় একে ডিজিটাল মানি বা ভার্চুয়াল মানি বা ইলেক্ট্রনিক মানি বলা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্য দিয়ে গ্রাহক পণ্য কেনা বেচা করতে পারবেন কিন্তু এটিকে তিনি ব্যাংকে বা লকার বা পকেটে নিয়ে ঘুরতে পারবেন না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন টেকনোলজি কি?
Cryptocurrency একটি ভ্যালু রয়েছে যা অন্যান্য কারেন্সির ভ্যালুর থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি আবার কমও হতে পারে। এটি নির্ভর করে তার জনপ্রিয়তার উপর। ক্রিপ্টোকারেন্সির ভ্যালু অপরিবর্তিত থাকে না, এর ভ্যালু সর্বদা ওঠানামা করে। যার ফলে একদিনে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভ্যালু নানান রকমের হতে পারে। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইনের মাধ্যমে কাজ করে। ব্লকচেইন পদ্ধতির সূচনা হয় ১৯৮০ সালে।
চেইন কথার অর্থ হলো শিকল। সহজ ভাষায় বললে ব্লকচেইন হল একটি চেনের মধ্যে অনেক গুলি ব্লকের সংযুক্ত অবস্থা। যখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে (Cryptocurrency) লেনদেন করা হয় তখন লেনদেনের সমস্ত তথ্য রেকর্ড করে রাখা হয় অর্থাৎ একটি ব্লকে লেনদেনের তথ্য নিরাপত্তার সহিত রাখা হয়। ব্লক গুলোকে নিরাপত্তা প্রদান করে খনি শ্রমিকরা।
Cryptocurrency Mining
একটি শক্তিশালী কম্পিউটার দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় যাকে কম্পিউটার মাইনিং বলা হয়। যারা কম্পিউটার মাইনিং করে তাদের মাইনার বলা হয়। Cryptocurrency গুলি হ্যাস ফাংশন এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর এর মত ক্রিপ্টোগ্রাফিকের মাধ্যমে কাজ করে।
A-Z About Cryptocurrency
- ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে গ্রাহকেরা পন্য কেনাকাটা করতে পারবেন।
- ক্রিপ্টো মুদ্রা দিয়ে গ্রাহকেরা অনলাইনে লেনদেন করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই আইনগত অনুমতি নিতে হবে।
- ক্রিপ্টো কারেন্সিকে গ্রাহকেরা দেশ-বিদেশে আদান প্রদান করতে পারবেন।
Cryptocurrency Benefits
1) আমরা যে রকম নোট ব্যবহার করি ২০০০ টাকার নোট, ৫০০ টাকার নোট সেক্ষেত্রে জাল নোট বা ছেঁড়া নোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু Cryptocurrency একটি ডিজিটাল মুদ্রা এক্ষেত্রে জাল বা বিকৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
2) কোনো ব্যক্তি যদি হঠাৎ দ্রুত দূরবর্তী স্থানে কাউকে টাকা পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি হল অন্যতম মাধ্যম। কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সি হল ডিজিটাল মুদ্রা, ডিজিটাল মুদ্রা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে বেশি সময় নেয় না।
3) যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই তাই ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো নির্দিষ্ট শর্তাবলী বা নির্দেশাবলী নেই।
4) টাকা ট্রান্সফারের (Money Transfer) ক্ষেত্রে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোন চার্জ কাটা হয় না।
5) ক্রিপ্টো মুদ্রা গুলিকে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকায় রূপান্তরিত করতে পারবেন গ্রাহকেরা।
6) ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
7) Cryptocurrency বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব ভালো বিকল্প কারণ এর মূল্য কখনো অনেকটা বেড়ে যায়।
8) ক্রিপটোকারেন্সির ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না।
Cryptocurrency Usage Disadvantage
1) ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যার ফলে Cryptocurrency মূল্য প্রবলভাবে ওঠানামা করে।
2) ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একটি ডিজিটাল মুদ্রা, তাই এতে হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
3) ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো ফিজিক্যালি অস্তিত্ব নেই।
4) ক্রিপ্টোকারেন্সি একবার স্থানান্তরিত হয়ে গেলে তা আর পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব।
5) ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সব দেশে বৈধ নয়।
6) ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সীমিত।
7) ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ কার্যকলাপ চালানোর আদর্শ পন্থা হতে পারে।
Most Popular Cryptocurrency at Present
1) Bitcoin.
2) Ethereum.
3) Ripple.
4) Tether.
5) Litecoin.
6) Monero.
7) Cosmos.
8) Peercoin.
9) Bit Torrent.
10) Name Coin.
11) USD Coin.
12) Stellar.
13) Polkadot.
14) Doge Coin.
15) Bitcoin Cash.
16) Binance Coin.
17) Cardano.
18) TRON.
19) Ethereum Classic.
Top Most Popular Cryptocurrency along with BitCoin
১) বিটকয়েন – বিটকয়েন ২০০৯ সালে Satoshi Nakamoto শুরু করেছিলেন। যা ছিল বিশ্বের প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি। এটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যয়বহুল ডিজিটাল মুদ্রা হল বিটকয়েন এর মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া।
২) ইথেরিয়াম – ২০১৫ সালে প্রথম ইথেরিয়াম শুরু হয়েছিল। ইথেরিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক। আগে ইথেরিয়াম এর মূল্য খুব বেশি ছিল না কিন্তু বর্তমানে একটি ইথেরিয়ামের মূল্য প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলারের সমান।
৩) ডগিকোয়েন – কয়েনে কুকুরের ছবি আছে বলে এর নাম ডগিকয়েন। এর উপর কুকুরের ছবি থাকায় এটি সকলের কাছে একটি মিমে পরিণত হয় এর ফলে টেসলা কোম্পানির মালিক ইলন মাস্কের (Elon Musk) সহায়তায় এর মূল্য বৃদ্ধি পায়।
৪) লাইট কয়েন – ২০১১ সালের চার্লি লি প্রথম লাইট কয়েন চালু করেন। যিনি গুগলের ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও কাজ করেছিলেন। লাইট কয়েন সবচেয়ে দ্রুততম লেনদেন এর জন্য পরিচিত ছিল।
৫) কার্ডানো – অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির গুলোর মতই কার্ডানো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। একটি কার্ডানোর মূল্য প্রায় ৬৯ মার্কিন ডলারের সমান। এর মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
৬) বিনান্স কয়েন – বর্তমানে খুব বেশি জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বিনান্স কয়েন। এই কয়েন গুলির মাধ্যমে ভ্রমণের জন্য ট্রেন এয়ারপ্লেন বুক সহ ট্রৈডিং করতে পারবেন।
৭) নেম কয়েন – নেম কয়েন মূলত বিটকয়েন এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। নেম কয়েনের ডোমেন নেম হলো সেন্সরশীপ প্রতিরোধ ডোমেন নেম .bit যার উপর ICANN এর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
৮) রিপল – এই ক্রিপ্টোকারেন্সিটি ২০১২ সালে আমেরিকান কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি ক্রিপটোকারেন্সির পাশাপাশি ক্রিপটো এক্সচেঞ্জও। একটা উল্লেখ্য বিষয়, আগে ভারতে Cryptocurrency বৈধ ছিল না কিন্তু ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা প্রদান করে। এরপর থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ বৈধ স্বীকৃত হয়।
Is Cryptocurrency Legal in India?
বর্তমানে ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধতা প্রদানের জন্য নানাবিধ প্রচেষ্টা করেন। দেশে অনেক মানুষই রয়েছেন যারা ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম জানলেও সে বিষয়টি কিভাবে কাজ করে তা জানতেন না এই প্রতিবেদনটি তাদের জন্য যথেষ্ট উপকারী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
Written by Sampriti Bose.