ফের একবার রাজ্যের শিক্ষকরা (School Teachers) পড়তে চলেছেন বিপাকে। রাজ্যের দেড় লক্ষ শিক্ষকের বিষয়ে এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে (Government of West Bengal) কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court). দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের যোগ্যতার সঠিক তথ্য দেখাতে না পারলে বাতিল হতে পারি রাজ্যের অসংখ্য শিক্ষকের চাকরি। ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন রাজ্যের অসংখ্য শিক্ষকেরা।
West Bengal School Teacher News.
রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Teacher Recruitment Scam). একের পর এক তথ্য সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার বিষয়ে সরব টেট উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা। এরপর, ২০২২ সালে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই আদালতে চলছে নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক মামলা। শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও আন্দোলন চলছে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের জন্য ঘোষণা
এরপর, চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিরাট মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu). উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোর্টের জটিলতা কাটলে ৭ দিনের মধ্যেই নিয়োগ করে দেওয়া হবে অর্থাৎ একবার আদালত সবুজ সঙ্কেত দিলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তবে, এবার যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে দুশ্চিন্তা আরো বাড়লো শিক্ষকদের (Teachers).
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বড় নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। আর বিচারপতির রায়ে ফের হাইকোর্টের ক্ষোভের মুখে পড়লো রাজ্য সরকার। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন কিছু দিন আগে মুর্শিদাবাদের গোথা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তার ছেলে অনিমেষ তিওয়ারিকে স্কুলের চাকরিতে নিযুক্ত করেছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল হাইকোর্টে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই মামলাতে CID তদন্তের নির্দেশ দিয়ে সিট গঠন করার কথা জানিয়েছিলেন।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ
আর এরপর তদন্ত শুরু হতেই এখনও পর্যন্ত সিআইডি অন্তত সাত জনকে খুঁজে পেয়েছেন যারা কোন রকম পরীক্ষা না দিয়েই বিভিন্ন স্কুলে চাকরি করছে। এরপর বাধ্য হয়ে রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে এবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে সমস্ত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের যোগ্যতার তথ্য ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’ এ আপলোড করতে হবে।বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা প্রসঙ্গে এই বিস্ফোরক নির্দেশ জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষা দফতরের অধীন সমস্ত স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের তথ্য ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টালে’ আপলোড করতে হবে। আর এই কাজ করতে হবে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে। শুধু তাই নয় বিচারপতি আরও মন্তব্য করেন, রাজ্যের একাধিক স্কুলে বহু শিক্ষক শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন যাদের কোনো যোগ্যতা নেই শিক্ষকতা করার, এমন অভিযোগও বার বার উঠে এসেছে।
বেআইনি নিয়োগ নিয়ে কড়া আদেশ
তাই স্কুলের শিক্ষক যে যে বিষয়ে পড়াচ্ছেন তা পড়ানোর তাঁর যোগ্যতা আছে কিনা, সেটা ছাত্র ছাত্রী বা অভিভাবকদের জানা প্রয়োজন। তাই সেই কারণেই প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকার যোগ্যতা কী, তা সরকারের পোর্টালে আপলোড করতে হবে। কিন্তু এদিকে রাজ্যের আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক বিচারপতির নির্দেশে পাল্টা জানান, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের তথ্য জড় করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।
তাই সেক্ষেত্রে যদি আরও কিছুটা সময় দেয় আদালত, তার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো সময় দিতে নারাজ বিচারপতি। তিনি নির্দেশ দেন, আরও দ্রুত কাজ করার। তিনি এদিন বলেন, কোনো রকম নিয়োগ পত্র ছাড়াই বহু শিক্ষক চার পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাই আর দেরি না করে কারা নিয়োগপত্র ছাড়াই স্কুলে চাকরি করছে সেটা সবার জানার দরকার।
আসলে মুর্শিদাবাদের গোথা হাইস্কুলের একটি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাতেই বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে এবং সেখান থেকেই রাজ্যের প্রতিটা স্কুলের শিক্ষকশিক্ষিকাদের জন্য হাইকোর্টের তরফে এরূপ নির্দেশ দেওয়া হয়। এমত অবস্থায় রাজ্যের অসংখ্য স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকারা তাদের যোগ্যতার প্রমাণপত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই পোর্টালে আপলোড করতে পারেন কিনা নাকি আরো কিছুটা বাড়তি সময় সত্যিই প্রয়োজন হয় সেটি দেখার বিষয়।
Written by Sampriti Bose.