মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কার্যকরী সমস্ত প্রকল্পগুলি যাতে সমগ্র বাংলার সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে যায় তার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে কার্যকরী করা হয়েছিলো দুয়ারে সরকার প্রকল্প। আর ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, আজ অর্থাৎ ১ লা নভেম্বর থেকে শুরু করে ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের সমগ্র জেলায় দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পগুলি আয়োজন করা হবে। এর পাশাপাশি আয়োজন করা হবে পাড়ায় সমাধান ক্যাম্পও।
দুয়ারে সরকারের এই ক্যাম্প গুলিতে ২৭ টি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে বলেই জানানো হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। এর পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে যে, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই আবেদনপত্র গুলির নিষ্পত্তি করা হবে এবং নাগরিকরা যে প্রকল্প, যোজনা অথবা স্কলারশিপের অধীনে আবেদন করেছেন তার অনুদান পাবেন।
আজ অর্থাৎ ১লা নভেম্বর,২০২২ তারিখ থেকে কার্যকরী দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পগুলি থেকে সমগ্র রাজ্যের নাগরিকরা খাদ্যসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী, মানবিক, তপশিলি বন্ধু, জয় জোহার, ঐক্যশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে শুরু করে ব্যাংকের বিভিন্ন কাজ, আধার কার্ডের বিভিন্ন তথ্য সংশোধন, আপডেট, নতুন আধার কার্ডের আবেদন এমনকী বিনামূল্যে সামাজিক যোজনার জন্য আবেদন পর্যন্ত করতে পারবেন।
তবে এখানেই শেষ নয়, প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট, জাতিগত শংশপত্র থেকে শুরু করে কৃষকদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্প, কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, ওয়েবার ক্রেডিট কার্ড, মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ড, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্রেডিট লিঙ্ক এর মতো সুবিধাগুলি মিলবে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকেই। তবে এই প্রকল্পগুলির মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় প্রকল্পগুলি হলো:-
১. স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প:- বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে খরচও বাড়ছে। আর সাধারণ মানুষ যাতে যেকোনো জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে পারে, অর্থের কারণে তাদের চিকিৎসা যাতে ব্যহত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের তরফে এই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে, যাতে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবার প্রত্যেক বছর চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে পাবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মোট ২০০০টি হাসপাতালে এই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা হয়ে থাকে।
২. কন্যাশ্রী প্রকল্প:- রাজ্য সরকারের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের তরফে মেয়েদের বাল্যবিবাহ রুখতে এবং তারা যাতে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে তার জন্য এই কন্যাশ্রী প্রকল্প কার্যকরী করা হয়েছে। এতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের অধীনস্থ যেকোনো স্কুলে পাঠরত অবিবাহিতা মেয়েদের প্রতি বছরে ১০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে। ১৮ বছরের পর যদি মেয়েরা অবিবাহিত অবস্থায় নিজের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে তবে তাদের এককালীন ২৫ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
৩. রূপশ্রী প্রকল্প:- পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের তরফে কার্যকরী এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যেসকল মেয়েদের বয়স ১৮ বছরের বেশি এবং যাদের বার্ষিক পারিবারিক আয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চেয়ে কম তাদের এই প্রকল্পের অধীনে বিবাহের ব্যবস্থাপনার জন্য ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়ে থাকে।
৪. খাদ্যসাথী প্রকল্প:- করোনা মহামারীর সময় পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের সাহায্যের খাতিরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বিনামূল্য কিংবা স্বল্পমূল্যে রেশনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিলো, এই প্রকল্পটি খাদ্যসাথী প্রকল্প নামে পরিচিত। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মারফত আপনারা এই খাদ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে পারবেন, আপনার ডিজিটাল রেশন কার্ডের সাথে আধার কার্ড এবং মোবাইল নম্বর সংযুক্তিকরণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনার রেশন কার্ডের যেকোনো রকম ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৫. শিক্ষাশ্রী প্রকল্প:- এই প্রকল্পের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনজাতির ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থাৎ তপশিলি জাতি উপজাতি এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবছরে ৮০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়ে থাকে।
৬. লক্ষ্মীর ভান্ডার:- রাজ্য সরকারের অধীনস্থ নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের তরফে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটি কার্যকরী করা হয়েছে মূলত বাংলার সমস্ত গৃহবধূদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য। এই প্রকল্পের অধীনে তপশিলি জাতি এবং উপজাতিভুক্ত মহিলাদের প্রতি মাসে ১০০০ টাকা এবং জেনারেল ও ওবিসি সম্প্রদায় ভুক্ত মহিলাদের প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়ে থাকে।